॥ সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতো অত্যাধুনিক অস্ত্র, ওয়াকিটকি ও জলপাই রঙের পোষাক ॥

নুরুল কবির বান্দরবান থেকে-

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-রুমা সীমানায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রকরে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গুলাগুলিতে ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৫মার্চ) তারাছা ইউনিয়নের ক্যচলং মৌজার পালিক্ষ্যং মুখ এলাকায় এই ঘটনা ঘটলেও ঘটনাস্থল দূর্গম ও নেটওয়ার্কবিহীন হওয়ায় রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যেতে পেরেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী বাদাম খেতে প্রুচুর পরিমাণ গুলাগুলির শব্দ শুনতে পান তারা। এই ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরবন্দি ছিল। আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখে ঘটনাস্থলে আসেন তারা।

রোয়াংছড়ি সদর উপজেলা থেকে অন্তত বিশ কিলোমিটার দূরে পালিক্ষ্যং মুখ এলাকাটি তারাছা ইউনিয়নের ক্যাচলং মৌজায়।

এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে জেএসএস নিয়ন্ত্রিত হিসেবে প্রচার ছিল। এছাড়া নিহতদের পোষাক ও হাতের ট্যাটু দেখে স্থানীয়রা ধারনা করছেন জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে গুলাগুলির এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের ধারনা, মগ পার্টির একটি গ্রুপ নৌকা যোগে রুমা উপজেলায় প্রবেশ করতে চেয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন দরে রুমার কয়েকটি গ্রাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য মহড়া দিয়েছে।

নদীর তীরে চার লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে জেলা সদর থেকে সাংবাদিকদের একটি দল, রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দল ঘটনাস্থলে যান।

সরেজমিনে দেখা যায়, পালিক্ষ্যংমুখ এলাকাটি দুই পাহাড়ের ঝিরি সীমানা নিয়ে রোয়াংছড়ির তারাছা ইউনিয়ন ও রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে।

ঝিরির অপরপ্রান্তে বাদাম ক্ষেতে বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ওয়াকিটকি, বেন্ডেলিয়র, জলপাই রঙের টুপিসহ বেশ কয়েকটি গুলির খোসা।

পাশাপাশি দুই সন্ত্রাসী পড়ে ছিল মাটিতে। তাদের পরণে জলপাই রঙের পোষাক। হাতের বাহুতে ট্যাটু আঁকা ছিল। পাঁচ গজ দূরে ছিল নীল টি শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরা আরেকজন। চতুর্থজনের লাশ পাওয়া গেছে দুইশ গজ দূরে পাহাড়ের কিনারায় মাটির নিচে। নিহতরা সবাই ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবক। ঘটনাস্থলের চিত্র দেখে বুঝা যায় নিহত সন্ত্রাসীদেরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টেনে হেঁছড়ে আনা হয়েছে।

এদিকে রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তারাছা ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর দল ও রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশের সুরুতহাল তৈরী করে লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হচ্ছিল।

এদিকে হঠাৎ করে বান্দরবানে খুনোখুনির এমন পরিস্থিতি ও আইন শৃংখলা বিষয় নিয়ে রবিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন পুলিশ সুপার জেরিন আখতার। এসময় চার লাশ উদ্ধারের কথা স্বীকার তিনি স্বীকার করে বলেন- আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত শনিবার বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে উনু মং মারমা নামে জনসংহতি সমিতির এক কর্মীকে গুলি করেছে বলে সংবাদ পাওয়া যায়। তিনি মারা গেছেন কিনা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও অস্ত্রধারীরা গুলি করার পর তাকে নিয়ে যায়। জলপাই রঙের পোষাক পরিহিত একটি দল জেএসএস সদস্য উনু মং মারমার উপর হামলা করেছে বলে পুলিশ জানায়। এখনো তার সন্দান মেলেনি।